যে সাজা হতে পারে সাবরিনা-আরিফের

করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার ‘ভুয়া’ রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী ও তার স্বামী প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফুল হক চৌধুরীসহ আটজনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায়ের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য রয়েছে।
ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেনের আদালত এ রায় ঘোষণা করবেন। সাবরিনা ও আরিফসহ ৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ সাত বছরের সাজা ভোগ করতে হবে।

২০২০ সালের ২৩ জুন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনা শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করেই ২৭ হাজার মানুষকে ভুয়া রিপোর্ট দেয় জেকেজি হেলথকেয়ার। এ অভিযোগে মামলা করা হয়। তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় বিচারিক আদালত।

যে অপরাধে যে সাজা-

ভুয়া সরকারি কর্মচারী পরিচয় দেওয়া: যদি কোনো সরকারি কর্মচারী হিসেবে কোনো বিশেষ সম্পত্তি ক্রয় বা ক্রমের জন্য দর কষাকষি না করতে আইনতঃ বাধ্য থাকা সত্ত্বেও নিজের নামে অথবা অন্য কারো নামে অথবা যুক্তভাবে অথবা অন্যান্যের সঙ্গে অংশ নিয়ে উক্ত সম্পত্তি ক্রয় করেন বা ক্রয় করার জন্য দর কষাকষি করেন। তাহলে তিনি দুই বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের বিনাশ্ৰম কারাদণ্ডে অথবা অর্থদণ্ডে অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন; এবং সম্পত্তিটি ক্রয় করা হয়ে থাকলে তা বাজেয়াপ্ত হবে।

কোনো কাজ দ্বারা জীবনের পক্ষে বিপদজনক কোনো রোগের সংক্রমণ ছড়াতে পারে জেনেও অবহেলাবশতঃ তা করা: কোনো ব্যক্তি যদি বেআইনিভাবে বা অবহেলামূলকভাবে এমন কোনো কাজ করে যা জীবন বিপন্নকারী মারাত্মক কোনো রোগের সংক্রমণ ছড়াতে পারে, তা জানা সত্ত্বেও বা বিশ্বাস করার কারণ থাকা সত্ত্বেও তা করে। তাহলে সেই ব্যক্তি ছয়মাস পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থদণ্ডে অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের শাস্তি: কোনো ব্যক্তি যদি অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে তাহলে তিনি তিন বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্ৰম কারাদণ্ডে অথবা অর্থদণ্ডে অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

প্রতারণা ও সম্পত্তি সমর্পণ করার জন্য অসাধুভাবে প্রবৃত্ত করা: কোনো ব্যক্তি যদি প্রতারণা করেন এবং প্রতারিত ব্যক্তিকে অসাধুভাবে অপর কোনো ব্যক্তিকে কোনো সম্পত্তি অংশ বা অংশবিশেষ প্রণয়ন, পরিবর্তন বা বিনাশ সাধনে প্রবৃত্ত করেন অথবা অসাধুভাবে প্রতারিত ব্যক্তিকে এমন কোনো স্বাক্ষরিত বা সিল মোহরযুক্ত বস্তুর সমুদয় অংশ বা অংশবিশেষ প্রণয়ন পরিবর্তন বা বিনাশ সাধনে প্রবৃত্ত করেন যা মূল্যবান জামানতে রূপান্তরযোগ্য। তাহলে তিনি সাত বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রমের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।

এ মামলার বিচার চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে ৪০ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে আদালত। গত ১১ মে আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে আসামিরা নিজেদের ‘নির্দোষ’ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন। গত ২৯ জুন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য ১৯ জুলাই দিন ধার্য করে আদালত।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনা শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করেই জেকেজি হেলথকেয়ার ২৭ হাজার মানুষকে রিপোর্ট দেয়। এর বেশিরভাগই ‘ভুয়া’ বলে চিহ্নিত হয়। এ অভিযোগে ২০২০ সালের ২৩ জুন অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। পরে ডা. সাবরিনা ও তার স্বামী আরিফুল চৌধুরীর বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা করা হলে দুজনকেই গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ঐ বছরের ৫ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে সাবরিনা-আরিফসহ আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক লিয়াকত আলী। অভিযোগপত্রে সাবরিনা ও আরিফকে প্রতারণার মূলহোতা এবং বাকি আসামিদের প্রতারণা ও জালিয়াতির কাজে সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

Full Video