‘আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দেওয়া তরুণীর পাশে দাঁড়ালেন মালালা

হিজাব ইস্যুতে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ভারতের কর্ণাটকে কলেজ ক্যাম্পাস। সম্প্রতি সেখানকার একটি কলেজে গেরুয়া ওড়না পরা একদল যুবক হিজাব পরা এক মুসলিম তরুণীকে উত্ত্যক্ত করায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, যা ক্রমশ বড় পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে। বলতে গেলে আন্তর্জাতিক একটি ইস্যু হয়ে দাঁড়াচ্ছে এ বিতর্কটি। এমন পরিস্থিতির মাঝে মুসলিম ওই তরুণীর পাশে দাঁড়ালেন নোবেল জয়ী মালালা ইউসুফজাই।‘আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দেওয়া তরুণীর পাশে দাঁড়ালেন মালালা

মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে টুইটারে হিজাব বিতর্ক নিয়ে মুখ খোলেন নোবেলজয়ী মালালা। হিজাব পরায় মুসলিম শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকতে পারবেন না, এ বিষয়টিকে ‘ভয়ানক’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

টুইটারে তিনি লেখেন, ‘পড়াশোনা এবং হিজাবের মধ্যে কোনো একটা বেছে নিতে বাধ্য করছে কলেজ। হিজাব পরে মেয়েদের স্কুলে যেতে নিষেধ করার বিষয়টি ভয়ানক। খোলামেলা হোক বা ঢাকা পোশাক নারীদের অবজেক্টিফিকেশনের ধারা চলছেই।’ একই সঙ্গে ভারতীয় নেতাদের প্রতি আবেদন নিয়ে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই মুসলিম নারীদের মূল সমাজ থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি রুখতে হবে।’ তবে তার এ আবেদনটি কতটা কাজে আসে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

এদিকে বিতর্কের মাঝেই মধ্যপ্রদেশের স্কুলেও হিজাব নিষিদ্ধ করার ইঙ্গিত দিলেন সে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী। বিজেপিশাসিত রাজ্যে স্কুল শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী ইন্দর সিং পারমার বলেন, ‘আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এ রাজ্যেও স্কুল ইউনিফর্ম সংক্রান্ত কড়া নিয়মনীতি কার্যকর করা হবে। স্কুল ইউনিফর্মের অংশ নয় হিজাব। তাই নিষিদ্ধ করা উচিত। বিষয়টি খতিয়ে দেখে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

তার মতে, ‘স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমভাবাপন্নতা এবং শৃঙ্খলা আনলে ইউনিফর্ম সংক্রান্ত কড়া ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’ স্বাভাবিকভাবেই তার এই মন্তব্যে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে।

এদিকে, ভারতের কর্নাটকের একটি কলেজে গেরুয়া ওড়না পরা একদল যুবক অবিরত উত্ত্যক্ত করে যাচ্ছিলেন হিজাব পরা তরুণীকে। কিন্তু তার জায়গা থেকে তাকে একচুল সরাতে পারেননি। তিনি নিজের জায়গায় শক্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন। দিল্লিভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিতে এমন একটি ভিডিও সম্প্রচার করা হয়েছে।

ওই মুসলিম ছাত্রীটি একাই উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যান। সামাজিকমাধ্যমে সেই ভিডিও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, ওই তরুণী তার স্কুটার পার্ক করে কলেজ ভবনের দিকে যাচ্ছিলেন। তখন ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগানে তার দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন একদল উগ্রবাদী তরুণ।

তাকে মোটেও বিচলিত করতে পারেনি তারা। বরং ‘আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দিয়ে তিনি জবাব দেন। স্লোগান দিতে দিতে তিনি এগিয়ে যেতে থাকেন সামনে, আর উত্ত্যক্তকারীরাও তার পিছু নেন। এরপর দাঁড়িয়ে এক উত্ত্যক্তকারীকে জিজ্ঞাসা করেন, আমি বোরকা পরলে তোমাদের সমস্যা কী? এরই মধ্যে স্লোগান দেওয়া লোকজন তার কাছে পৌঁছে যান।

পরে কলেজ কর্মকর্তারা এসে তাকে নিয়ে নিরাপদে নিয়ে যান। মুসকান নামের ওই তরুণী বলেন, একাই তাদের মুখোমুখি হতে আমি উদ্বিগ্ন না। হিজাব পরার অধিকারের দাবিতে তিনি লড়াই অব্যাহত রাখবেন বলেও অঙ্গীকার জানিয়েছেন।

হিজাব বনাম গেরুয়া স্কার্ফের লড়াই যাতে সাম্প্রদায়িক না হয়ে ওঠে সে কারণে মঙ্গলবার ভারতের কর্ণাটকের দুটি কলেজে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্যটির চিকমাগালুরে একটি কলেজে গেরুয়া স্কার্ফ পরা ছাত্রীদের সঙ্গে হিজাব পরা ছাত্রীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। হিজাব পরিহিতদের সমর্থনে নীল স্কার্ফ পরে বিক্ষোভ দেখান দলিত ছাত্ররা। এর পরই কলেজে ছুটি ঘোষণা করা হয়।

শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে শিক্ষার্থীসহ সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কর্নাটকের হাইকোর্ট। উদুপির একটি সরকারি কলেজের পাঁচ নারীর আবেদন করা একটি পিটিশনের শুনানি চলছে আদালতে।

গত মাসে কর্ণাটকের সরকারি মহিলা পিইউ কলেজ থেকে প্রথম হিজাব প্রতিবাদ শুরু হয়। তখন হিজাব পরে কলেজে আসলে ছয় শিক্ষার্থীকে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। এরপর তা দেশটির বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

বেশ কয়েকটি কলেজে হিজাব পরা নিষিদ্ধ করা হলে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। হিজাবের বিরুদ্ধে গেরুয়ারা জোরালো ও মুখোমুখি অবস্থান নিতে শুরু করেন। এরপরেই সমতা, ঐক্য ও জনশৃঙ্খলা নষ্ট করে এমন পোশাক পরা নিষিদ্ধ করেছে কর্ণাটক সরকার।

Full Video