ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথ এখন বিলীনপ্রায়

ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথ এখন বিলীনপ্রায়। দীর্ঘদিন সংশ্লিষ্টদের কোনো তদারকি না থাকায় অনেক স্লিপার গায়েব হয়ে গেছে। স্লিপারের ওপরই গড়ে উঠেছে বসতবাড়িসহ নানা প্রতিষ্ঠান। স্টেশনঘরসহ নানা স্থানে আগাছা জন্মেছে। ২০১৯ সালে পুনরায় রেলপথটি চালু করার জন্য সমীক্ষা হলেও উদ্যোগটি থেমে আছে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ১৯২৯ সালে ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথ চালু করা হয়। ২৭ কিলোমিটারের এ পথে বন্ধুয়া, দৌলতপুর, আনন্দপুর, পীরবক্স মুন্সির হাট, নতুন মুন্সির হাট, ফুলগাজী, চিথলিয়া, পরশুরাম ও বিলোনিয়ায় ৮টি স্টেশন স্থাপন করা হয়। সড়ক যোগাযোগ না থাকায় এক সময় এ রেলপথ ছিল ফেনী থেকে ফুলগাজী ও বিলোনিয়ার শিক্ষার্থী, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নের একমাত্র মাধ্যম। ১৯৭১ সালের পর রেল যোগাযোগের পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগের উন্নতি হওয়ায় কদর কমে যায় এ রেলপথের। ব্যাপক লোকসানের কারণে ১৯৯৭ সালের ১৭ আগস্ট কর্তৃপক্ষ ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথ বন্ধ ঘোষণা করে।

দীর্ঘ ২৫ বছর পরিত্যক্ত থাকায় লাইনের অনেক স্থানে স্লিপার চুরি হয়ে গেছে। রেললাইনের ওপর দোকানপাট, ঘরবাড়ি ও নানা রকমের প্রতিষ্ঠান বসিয়েছে প্রভাবশালীরা। দখল হয়ে গেছে রেল বিভাগের রক্ষিত ৮টি স্টেশন ঘর, সরঞ্জামাদি ও বিভিন্ন সম্পত্তি। এসব ঘটনায় লাকসাম জিআরপি থানায় অন্তত ২৫/৩০টি মামলা হলেও কার্যত কোনো লাভ হয়নি বলে দাবি সংশ্লিষ্ট বিভাগের।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে ফেনী-বিলোনিয়া রেল লাইনটি পুনর্স্থাপনের জন্য প্রাযুক্তিক অর্থনীতির সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ দেওয়া হয়েছে ভারতের হায়দারাবাদের আরভে অ্যাসোসিয়েটস আর্কিটেক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্টস কোম্পানিকে। তৎকালীন বাংলাদেশ রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চল) সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ফেনী জেলা প্রশাসককে পরিত্যক্ত ফেনী-বিলোনিয়া রেললাইনের জন্য দুই লেন পুনর্স্থাপনে প্রাযুক্তিক অর্থনীতির সম্ভাব্য সমীক্ষায় সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ওই সময় রেললাইন জুড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিতকরণসহ আনুসাঙ্গিক কিছু কাজ করে সমীক্ষা দল। পরে জরিপ প্রতিবেদনটি তৈরি করে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল বিভাগে পাঠানো হলেও আর কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি।

পরশুরাম উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদার জানান, ফেনী-বিলোনিয়া রেললাইনের সম্পদের যথাযথ সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এই রেলপথ চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দর ও বিলোনিয়া স্থলবন্দরে পণ্য পরিবহন অনেক সহজ হবে। লাইনটি চালু হলে বাণিজ্যিক সুবিধা বাড়বে ও মানুষের উপকার হবে।

ফেনী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার সফিকুর রহমান জানান, সরকার বন্ধ থাকা সকল রেলপথ চালুর বিষয়ে পুনরায় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ফেনীতে বন্ধ থাকা বিলোনিয়া রেলপথ চালুর বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ রয়েছে। সে বিষয়ে ইতোমধ্যে সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Full Video