মালদ্বীপে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ ‘স্যান্ড ব্যাংক আইল্যান্ড

‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টেলম্যান। মাই নেম ইজ চাংকি। ইফ ইউ নিড এনিথিং জাস্ট লেট মি নো।’ ৪ ডিসেম্বর, সকাল ৯টা। দাঁড়িয়ে আছি মালদ্বীপের হুলহোমালে ফেরি জেটিতে। গন্তব্য মালদ্বীপের অন্যতম আকর্ষণ কাফু স্যান্ড ব্যাংক আইল্যান্ড।

ট্যুর অপারেটর চাংকি যখন গন্তব্যস্থল সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং দিচ্ছিলেন তখন অধিকাংশ পর্যটকের এদিকে মনোযোগ নেই। সাত সকালে ঘুম ভেঙে উঠে আসতে কষ্ট হলেও ফেরি জেটির সামনে পর্যটকদের সবার মুখ থেকে ‘ওয়াও’, ‘ওয়ান্ডারফুল’ দুটি শব্দ বেরিয়ে এলো।

চোখ জুড়ানো অপরূপ দৃশ্য। চারদিকে সারি সারি নারকেল গাছ। মহাসাগরের নীলাভ জলরাশি। জেটের চারপাশে নোঙর করা অসংখ্য ছোট-বড় স্পিডবোট, বোট ও জাহাজ। মাথার ওপর নীল আকাশে সি-প্লেনের ছুটে চলার দৃশ্যে যেন ক্যালেন্ডারের পাতায় দেখা কোনো ছবি।

ট্যুর গাইড মালদ্বীপিয়ান যুবক চাংকি জানালেন, ফেরি জেটি থেকে স্যান্ড ব্যাংক আইল্যান্ডে পৌঁছাতে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় লাগবে। সাদা বালুর ওই আইল্যান্ডে পর্যটকদের আনন্দ ও বিনোদন দেওয়ার জন্য তারা সব ধরনের ব্যবস্থা রেখেছেন।

মালদ্বীপে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ ‘স্যান্ড ব্যাংক আইল্যান্ড’

স্যান্ড ব্যাংক আইল্যান্ডে রওনা হতেই বোটের পর্যটকদের অনেকেই ছাদের ওপর উঠে চারপাশ দেখে আনন্দে চিৎকার করতে লাগলেন। ভারত মহাসাগরের একাংশ দিয়ে স্পিডবোট দ্রুতগতিতে সামনে যতই এগিয়ে যাচ্ছিলো পানির রং বদলে নীলাভ থেকে কালচে নীল আকার ধারণ করতে লাগলো।

ট্যুর গাইড জানালেন, যেখানে পানি কম সেখানে পানি নীলাভ আর যেখানে গভীরতা বেশি সেখানে পানি কালচে নীলাভ। যেতে যেতে ট্যুর অপারেটর বিভিন্ন আইল্যান্ড দেখিয়ে আইল্যান্ডটির বর্ণনা দিতে লাগলেন।

মিনিট চল্লিশেক পর চাংকি সকলকে ডেকে অনেকটা দূরে মহাসাগরের মাঝখানে সাদা বালুর দ্বীপ দেখিয়ে জানালেন, আজকের দিনটা সেখানেই আনন্দে কাটবে। স্যান্ড ব্যাংক আইল্যান্ডের সামনে যেতেই পর্যটকরা হর্ষধ্বনি দিয়ে উঠলেণ। চারদিকে নীলাভ জলরাশি আর মাঝখানে সাদা বালুকাময় ‘স্যান্ড ব্যাংক আইল্যান্ড’। আইল্যান্ডের সামনে স্পিডবোট থামতেই ট্যুর গাইডের আরেক সদস্য মই বসিয়ে সবাইকে নীচে নামার সুযোগ করে দিলেন। কিন্তু পর্যটকদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত তরুণদের যেন আর তর সয় না। মইয়ের অপেক্ষায় না থেকে তাদেরকে ধুম করে পানিতে ঝাঁপ দিতে দেখা যায়। আইল্যান্ডে নেমে সবাই নীলাভ জলরাশিতে ধাপাধাপি শুরু করে দিল।

মালদ্বীপে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ ‘স্যান্ড ব্যাংক আইল্যান্ড’

চাংকিসহ অন্যান্যরা জানালেন, তাদের কাছে পানির নিচে ডুবে প্রবাল ও মাছের ছুটে চলার দৃশ্য দেখার জন্য সব ধরনের উপকরণ রয়েছে। এছাড়া ভলিবল খেলার বল, চালানোর জন্য ছোট বোট ও ওয়াটার মোটরবাইক রয়েছে। এসময় দুটি বোটে আসা শতাধিক পর্যটককে আনন্দে মেতে উঠতে দেখা যায়। ঘণ্টা দুয়েক পানিতে ধাপাধাপির পর ক্ষুধায় সবার পেট যখন চো চো করছে তখন ট্যুর গাইডরা বালুতে লোহার স্ট্যান্ড পুতে টেবিল বানিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার পরিবেশন করলেন। খেয়ে দেয়ে আরেকদফা পানিতে লাফালাফি দাপাদাপি চললো।

অপরূপ সৌন্দর্যের এ দ্বীপে কখন যে সকাল ও দুপুর গড়ালো তা কেউ বুঝতে পারলো না। ট্যুর গাইড যখন অন্য একটি স্পটে যাওয়ার জন্য তাগাদা দিলেন তখন সবাই ফিরে যাওয়ার জন্য পোশাক বদলে তৈরি হতে লাগলো। দিনভর পর্যটকরা বিভিন্ন খাবার খেয়ে যে উচ্ছিষ্ট ফেলেন, ট্যুর গাইডের সদস্যরা সেগুলো বড় বড় প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে পরিষ্কার করে ফেলেন।

ট্যুর গাইড চাংকি জানান, তারা দ্বীপে কখননো এক টুকরো ময়লা বা উচ্ছিষ্টও ফেলে যান না। যখন স্পিডবোটটি ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন দিনভর আনন্দে মাতোয়ারা থাকা পর্যটকদের চোখেমুখে এক ধরনের বিষাদের ছায়া দেখা যায়।

Full Video