ছয় শতাংশের বসতভিটা ছাড়া কিছুই নেই পঞ্চাশোর্ধ্ব সালেহা বেগমের। মাথা গোঁজার সে ঠাঁইটুকুও কেড়ে নিতে মরিয়া তিস্তা। গত দুই মাস ধরে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের চরগনাই গ্রামের সালেহা বেগমের চোখে ঘুম নেই। শুধু সালেহা বেগমই নয় ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে ওই ইউনিয়নের দুই শতাধিক পরিবারের।
তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা জানান, উপজেলার বালাপাড়া ও টেপামধুপুর ইউনিয়নে নদী তীরের দশ গ্রামের একাংশ প্রায় বিলীন হতে চলেছে। ইতোমধ্যে নদীগর্ভে ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে অনেক পরিবার। ভাঙনের কবলে রয়েছে অনেক পরিবার। প্রায় আট কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রতিদিন ধসে পড়ছে মাটি।
চরগনাই গ্রামের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব আজিজার রহমান জানান, তিস্তার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত কয়েকদিনে ভাঙনে বেশকিছু বসতবাড়ি, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিতে রয়েছে অনেক বসতবাড়ি, আবাদি জমি ও ফলদ-বনজ গাছ।
দীর্ঘদিন আগে স্বামী ছেড়ে চলে যায় চরগনাই গ্রামের বুলবুলি বেগমের। এক ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে একটি ঘর তুলে বসবাস করছেন তিনি। কিন্তু নদী ভাঙতে ভাঙতে ঘরের কাছে চলে এসেছে। হয়তো কয়েকদিনের মধ্যে বাবার বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
চর বিশ্বনাথ গ্রামের বাসিন্দা আয়েশা আক্তার বলেন, বাড়ির কাছে চলে এসেছে নদী। সবসময় আতঙ্কে থাকি, কোন সময় ভেঙে যায়। আগে তিনবার বসতবাড়ি সরিয়ে নিয়েছি। এখন আবার সরাতে হবে। ভাঙনের ভয়ে ঘুমাতে পারি না, স্বামী-সন্তান নিয়ে জেগে থাকি।
চরগনাই গ্রামের আবু বক্কর বলেন, নদীর ভাঙনে তালুক সাহাবাজ গ্রামের নদী পাড়ে বালুর ব্যাগ ফেলা হলেও এখানে ফেলা হচ্ছে না। সবসময় আতঙ্কে থাকি কোন সময় সব নদীতে চলে যায়।
পূর্ব তালুক শাহাবাজের ক্ষীরোদ চন্দ্র বলেন, এখানকার অধিকাংশ পরিবার একাধিকবার তিস্তার ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব অবস্থায় অন্যের জমিতে ও বাঁধের ওপর বসবাস করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন না ঠেকালে আজীবন রাস্তায় পড়ে থাকতে হবে আমাদের।
টেপামধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, ভাঙনে অনেকের বসতভিটা ও আবাদি জমি নদীতে তলিয়ে গেছে। প্রতিদিনই নদীর পাড় ভাঙছে। এতে করে তীরবর্তী গ্রামের কয়েকশ ঘরবাড়ি ভাঙনের মুখে রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে নদী শাসন ও বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন।
বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনছার আলী বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত তহবিল ও টিআর প্রকল্পের অর্থায়নে বাঁশ দিয়ে নদীর তীর ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হয়েছিল।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, উপজেলার নদীর তীরবর্তী গ্রামে ভাঙনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা খালি জিও ব্যাগ সরবরাহ করেছি। স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছে।
![](https://www.onews24.com/wp-content/uploads/2024/05/Download_.gif)