১৯১ বিদ্যালয়ে পাঠদানের কী হবে?

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার খবরে একদিকে যেমন আনন্দ, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে উৎকণ্ঠায় অভিভাবকরা। তার উপর কয়েক দফার বন্যায় রংপুর বিভাগের বিভিন্ন চরাঞ্চলের কিছু ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উপস্থিতি হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

করোনা মহামারীর কারণে টানা ১৮ মাস পর আগামীকাল রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে শিক্ষাকার্যক্রম। ইতিমধ্যে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী রংপুরসহ বিভাগে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চরাঞ্চলে বেশ কিছু বিদ্যালয়ের মাঠ ও মাঠের বাইরে এখনো পানি জমে আছে। কোনো কোনো বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে পানি নেমে গেলেও রয়েছে কর্দম। কোথাও কোথাও বন্যা, অতিবৃষ্টি ও ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিদ্যালয়ের আসবাব থেকে অবকাঠামো। বিদ্যালয়ের মেঝেতে গর্ত, চরাঞ্চলের টিনশেড বিদ্যালয়গুলোর বেড়া নষ্ট। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বসার চেয়ার ও টেবিল নষ্ট হয়েছে। সেগুলো মেরামতের কাজ চলছে।

শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী রোববারের মধ্যে পাঠদানের উপযোগী করা হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। যে কয়টি বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে, সেগুলো পাশের বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে আপাতত চালু হবে। মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ মিললে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করার প্রস্তটি নেয়া হচ্ছে।

রংপুর নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (জেলা স্কুল, কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও জুম্মাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) ঘুরে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি ক্লাসরুম সাজানো হয়েছে বেলুন ও রঙিন কাগজ দিয়ে। এর পাশাপাশি রাখা হয়েছে আইসোলেশন রুম সুবিধাসহ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানান পদক্ষেপ।

এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার খবরে খুশি শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ সময় পর ফিরবেন চিরচেনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তাই শিক্ষা সরঞ্জাম কেনার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক পোশাক (স্কুল ড্রেস) বানাতে ব্যস্ত সময় যাচ্ছে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের।

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ আরটিভি নিউজকে বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে। এখন ঘরবন্দি লাখো শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। তবে সারাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের পাঠদানের বাইরে রাখলে সরকারের এই উদ্যোগ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।

অপরদিকে অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা না দিয়ে শিক্ষাকার্যক্রম কতটা সফল হবে এ নিয়ে উৎকণ্ঠায় তারা।

রংপুর জেলা স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. নজরুল ইসলাম জানান, সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু ও পাঠদানে যে সকল নির্দেশনা দিয়েছে সে নিয়মে শিশুদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে যাবে। এখন সবাই বলছে নিয়ম মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাবেন পরে দেখা যাবে চালু হওয়ার সব আগের মতই চলবে । এতে অনেকই ঝুঁকিতে পড়বে শিশু শিক্ষার্থীরা।

রংপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া আরটিভি নিউজকে বলেন, অনেকদিন পর স্কুল খুলছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাসে অংশ গ্রহণ করবেন। অনেক দিন বিদ্যালয়ের স্যার ম্যাডাম ও বান্ধবীদের সাথে দেখা হবে । তাই সে অনেকটাই উচ্ছ্বসিত।

রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিস আরটিভি নিউজকে বলেন, এ বছর বিভাগের পাঁচ জেলায় বন্যা, অতিবৃষ্টি ও ঝড়ে ১৯১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে গাইবান্ধায় ১০২টি, কুড়িগ্রামে ৭৩টি, নীলফামারীতে ১০টি, লালমনিরহাটে ৫টি এবং রংপুরে একটি রয়েছে। এ ছাড়া নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে আরও চার বিদ্যালয়।

এসব বিদ্যালয় মাঠে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় অভিভাবকদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা এসব বিদ্যালয় পরিদর্শনও করেছেন। নদীগর্ভে বিলীন হওয়া বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে নয়তো বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর রংপুরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম আরটিভি নিউজকে জানান, এবার রংপুর অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় দুই শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রাথমিক স্তরের এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেয়া হয়নি। এসব শিক্ষার্থীদের পাঠদান নিশ্চিতে দ্রুত উদ্যোগ নিতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি।

এছাড়া শিক্ষার্থীদের পাঠদান নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। রোববারের আগেই বিদ্যালয়গুলোর শ্রেণিকক্ষ পাঠদান উপযোগী করে তোলা হবে। সে অনুযায়ী কাজও চলছে বলে তিনি জানান।

Full Video