দুর্দশাগ্রস্ত চট্টগ্রামবাসী

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের নাগরিকদের জীবনযাত্রা কেমন-এ প্রশ্নের একটাই উত্তর আর তা হলো-ভালো নয়। বস্তুত, নানারকম নাগরিক দুর্ভোগের শিকার চট্টগ্রামবাসী এক ধরনের মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

জলাবদ্ধতার কথাই ধরা যাক, নগরীর ৭০ লাখ মানুষের দুর্ভোগের মূল কারণ এই জলাবদ্ধতা। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নগরবাসীর ঘুম হারাম হয়ে যায়। বাসাবাড়ি, ব্যবসা কেন্দ্র, হাসপাতাল, আবাসিক এলাকা-সবই জলমগ্ন হয়ে পড়ে সামান্য বৃষ্টিতেই। সড়ক-মহাসড়ক, অলিগলি পরিণত হয় অথৈ নদীতে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রার্থীরা নগরীর জলাবদ্ধতা দূর করার প্রতিশ্রুতি দেন বটে, কিন্তু একের পর এক মেয়র নির্বাচিত হলেও সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয় না। চট্টগ্রামবাসীর চলাচলেও রয়েছে নানারকম বাধাবিপত্তি।

যানজট তাদের নিত্যসঙ্গী। ওদিকে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে সৃষ্টি হয়েছে আরেক উপদ্রব। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণযজ্ঞ চলছে দুবছর ধরে। এর ফলে সৃষ্ট যানজটের ধকল সইতে হবে আরও তিন বছর। আবার নিয়মিত খোঁড়াখুঁড়ির কারণে শীতকালে ধুলার অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে যেমন, তেমন বর্ষায় ভাঙা রাস্তায় কাদামাটি মাড়িয়ে চলাচল করতে গিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় ভোগান্তি।

ওদিকে ৬৩৫ কিলোমিটার ফুটপাতের ৬০ ভাগই এখন বেদখলে। শুধু ফুটপাত নয়, কোথাও কোথাও ফুটপাত ছাড়িয়ে সড়কও গিলে খেয়েছে অবৈধ দখলদাররা। ভাসমান হকাররাও ফুটপাতের বিশাল একটি অংশ দখলে রেখেছে।

চট্টগ্রাম নগরীর গণপরিবহণের আরেক নাম গণভোগান্তি। প্রতিদিন সকালে নগরীর সব বাস স্টপেজে হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষ হা-পিত্যেশ করেন কোনোরকমে একটি বাসে চড়ার জন্য। একই অবস্থা তৈরি হয় বিকালে অফিস ও কারখানা ছুটির পর। বৃহস্পতিবার এলে এই দুর্ভোগ কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

শুক্র ও শনিবার অফিস-আদালত বন্ধ থাকায় হাজার হাজার মানুষ গ্রামের বাড়িমুখী হলে বাড়ে ঝক্কি-ঝামেলা। নগরীর ১৭টি রুটে চলছে মাত্র ৪০০ যানবাহন। নতুন করে গাড়ি নামানোর নেই উদ্যোগ। পানির অপর নাম জীবন হলেও চট্টগ্রামবাসী পানির সংকটের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন।

নগরীর অর্ধেক বাসিন্দাই এখনো ওয়াসার পানিবঞ্চিত। অনেক এলাকায় যায়নি ওয়াসার পাইপলাইন। সিটি করপোরেশনে দিন দিন জনসংখ্যা বাড়লেও সে অনুপাতে সংযোগ লাইন স্থাপন ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারেনি ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। অগভীর নলকূপ বসিয়েই পানির ব্যবস্থা করতে হচ্ছে অনেক এলাকার বাসিন্দাদের।

চট্টগ্রামবাসীর দুর্ভোগ ও যন্ত্রণা উপশমের উপায় কী-এ এক বড় প্রশ্ন। নগরীর সমস্যা ও সংকট বহুমুখী। তাই এর সমাধানের উপায় সহজ নয়। চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, সেবা সংস্থাগুলোর কর্তৃত্ব মেয়রের হাতে দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনে এ ব্যাপারে আইন করতে হবে।

আমরা মেয়রের এ কথার সঙ্গে একমত। এ ব্যবস্থা তৈরি হলে সমস্যা ও সংকটের জন্য মেয়রকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা যাবে। বস্তুত, চট্টগ্রামবাসীর দুর্ভোগ লাঘবের জন্য মূল দায়িত্ব নিতে হবে মেয়রকেই। এরপর আসে অন্যান্য কর্তৃপক্ষ ও জনগণের সহযোগিতার প্রশ্ন।

আমরা মনে করি, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার ইস্যুটিকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। এরপর আসে যানজট ও গণপরিবহণের সমস্যা। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার ৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে জলাবদ্ধতা নিরসনে।

এসব প্রকল্প যাতে সঠিক সময়ে যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অন্যান্য সমস্যার ক্ষেত্রেও যথাযথ পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নে আন্তরিক হতে হবে মেয়র ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে। চট্টগ্রামবাসী ধীরে ধীরে দুর্ভোগ ও যন্ত্রণামুক্ত হোক-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

Full Video