৪৪০ টাকার ওমানি মুদ্রা ২ লাখ টাকায় বিক্রি!

অধিক লাভের প্রলোভন দেখিয়ে মাত্র ২২ টাকা মানের ওমানি মুদ্রা ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করত একটি চক্র। সম্প্রতি চক্রটি এক ভুক্তভোগীর কাছে ২০টি ওমানি মুদ্রার বিনিময়ে ২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। অথচ ২০টি ওমানি মুদ্রার বাজার মূল্য মাত্র ৪৪০ টাকা।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) দলনেতাসহ এই চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। তারা হলো- চক্রের দলনেতা আল আমিন (৩৫) ও শাহজাহান সিরাজ (৪৬)।

শনিবার বিকাল ৫টায় ডিএমপি উত্তরা পশ্চিম থানাধীন খালপাড়স্থ সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস অফিসের সামনে থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ জানায়, শনিবার দুপুর আড়াইটায় লুৎফর রহমান নামে একজন ব্যবসায়ী নগদ দুই লাখ টাকা নিয়ে ফিরছিলেন। কদমতলী চৌরাস্তার পূর্ব পাশে জাহিদ মার্কেটের সামনে দিয়ে পায়ে হেঁটে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন সিএনজি ড্রাইভার তাকে স্যার সম্বোধন করে ডাক দেন। তিনি সিএনজিওয়ালার কাছে গেলে ড্রাইভার তাকে কয়েকটি বিদেশী মুদ্রার নোট দেখিয়ে কোথায় একচেঞ্জ (বিনিময়) করা যাবে সেটা জানতে চান।

লুৎফর রহমান ওই ড্রাইভারকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙানো যায় জানালে ড্রাইভার তাকে ২০-২৫টি বিদেশী মুদ্রা দেখান এবং ভাঙালে কত টাকা পাওয়া যাবে তা জানতে চান। এ সময় ওই সিএনজি’র কাছে অজ্ঞাতনামা আরও ২ ব্যক্তি হাজির হন এবং লুৎফর রহমানের পাশে দাঁড়ান। তারা একজন ব্যাংকে চাকরি এবং অপরজন মানি এক্সচেঞ্জে চাকরি করেন বলে জানান।

ওই দুই ব্যক্তি জানান, বিদেশী টাকাগুলো অনেক দামি এবং ওমানি নোট। মানি এক্সচেঞ্জের দোকানে ভাঙালে অনেক টাকা পাওয়া যাবে। তাদের একজন তখন লুৎফর রহমানকে দেখিয়ে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে সিএনজি ড্রাইভারের নিকট থেকে ৪টি নোট কিনে নেন এবং লুৎফর রহমানকে উক্ত নোট কেনার জন্য প্রলুব্ধ করেন।

সিএনজি ড্রাইভার তার কাছে আরও ২০-২২টি নোট রয়েছে বলে জানায়। এই নোটগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য প্রতিটি ২২ হাজার টাকা জানালে তাদের কথায় বিশ্বাস করে লুৎফর রহমান সিএনজি ড্রাইভারকে নগদ ২ লাখ টাকা দিয়ে ২০ টি ওমানী নোট নেন। তখন সিএনজি ড্রাইভারসহ অজ্ঞাত ২ ব্যক্তি সিএনজিতে করে দ্রুত বাবু বাজারের দিকে চলে যান। পরবর্তীতে লুৎফর রহমান জানতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এ বিষয়ে গত ২৭ আগস্ট দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় তিনি একটি মামলা করেন।

পিবিআই ঢাকা জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খোরশেদ আলমের সহযোগিতায় মামলাটি তদন্ত কর্মকর্তা এসআই (নিরস্ত্র) মো. আনোয়ার হোসেন তদন্ত শুরু করেন। তিনি প্রতারক চক্রের দুইজনকে গ্রেফতার করেন।

গ্রেফতারকৃত আসামিরা পুলিশকে জানায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অধিক টাকার লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে অভিনব কায়দায় এভাবে প্রতারণা করে আসছেন। তারা লুৎফর রহমানের সঙ্গে প্রতারণা করে তার দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নেবার ঘটনা স্বীকার করেন।

আসামি আল আমিনের কাছ থেকে পুলিশ ৪০টি ওমানী মুদ্রা ও নগদ ১০ হাজার টাকা এবং আসামি শাহজাহান সিরাজের কাছ থেকে ১৮টি ওমানী মুদ্রা ও নগদ ১০ হাজার টাকা এবং প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সিএনজি (রেজি নং- ঢাকা মেট্রো-থ-১৬-০৯৪৩) জব্দ করে।

ঘটনার বিষয়ে পিবিআই হেডকোয়ার্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার এসপি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, আসামি আল আমিন এই সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের দলনেতা। দীর্ঘ দিন ধরে তারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিনব কায়দায় বিভিন্ন ব্যাংকে গিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনকারীদেরকে পর্যবেক্ষণে রেখে তাদের পিছু নিত। সুকৌশলে তারা বিভিন্ন দেশের কারেন্সি নোট প্রদর্শন করে অধিক লাভের প্রলোভন দেখিয়ে সহজ সরল মানুষকে শিকারে পরিণত করত। এরপর তারা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যেত।

Full Video