যমুনায় পানি বেড়ে বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

উজান থেকে নেমে আসা ঢলে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দুর্গম চরের বাসিন্দারা পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা ইউনিয়নে ছবি: প্রথম আলো
উজান থেকে নেমে আসা ঢলে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে এ নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সিরাজগঞ্জ ও সারিয়াকান্দির ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এদিকে ধরলা নদীর পানি বাড়ায় কুড়িগ্রামে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বাড়ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার মথুরাপাড়া পয়েন্টে যমুনার নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

যমুনায় পানি বাড়ায় সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনাবেষ্টিত ইউনিয়ন চালুয়াবাড়ি, কাজলা, কর্নিবাড়ি, বোহাইল, হাপশেরপুর, চন্দনবাইশা, কামালপুর, কুতুবপুর এবং সদর ইউনিয়নের দুর্গম চর এবং নদীতীরবর্তী গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

যমুনায় পানি বাড়ায় হাটবাড়ি, দলিকা, মানিকদাইড়, শিমুলতাইড়, সুজনেরপাড়া, বিরামের পাঁচগাছি, খাটিয়ামারি, আউচারপাড়া, ফাজিলপুর, বহুলাডাঙ্গা, ভাঙ্গুরগাছা, কাজলা, উত্তর টেংরাকুড়া, দক্ষিণ টেংরাকুড়া, পাকুরিয়া, ময়ূরের চর, ট্যাংরা-মাগুড়া, চর ঘাগুয়া, জামথল, বেড়া পাঁচবাড়ীয়া, দক্ষিণ শংকরপুর, পূর্ব ধারাবর্ষা, পশ্চিম ধারাবর্ষা, কেষ্টিয়ারচর, কোমরপুর, চানবাড়ী, মাঝবাড়ী, কালাইহাটা, পৌতিবাড়ী, চর মাঝিরা, আগ বোহাইল, নিজ বোহাইল, আওলাকান্দি, দক্ষিণ বেণীপুর, বাওইটোনা, কুড়িপাড়া, পাকেরদহ, শনপচা, মুলবাড়ী, নান্দিনাচর, ডাকাতমারা, তালতলা, মিলনপুর, শালুখা, চর বাটিয়া, ধনারপাড়া, শিমুলবাড়ী, চকরতিনাথ, করমজাপাড়া, নয়াপাড়া, কর্ণিবাড়ী, দীঘাপাড়া নামের ৭০ থেকে ৮০টি চরের বাসিন্দারা দুর্ভোগে পড়েছে।

যমুনার দুর্গম চরাঞ্চলবেষ্টিত চালুয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ইউপি) শওকত আলী বলেন, যমুনার ঢলে তাঁর ইউনিয়নের হাটবাড়ি, দলিকা ও নোয়ারপাড়া চরের বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। হাজারখানেক মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। অন্য চরের মানুষও পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানি আরও বৃদ্ধি পেলে মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যাবে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাসেল মিয়া বলেন, যমুনায় পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি আরও বাড়বে বলে পাউবো থেকে জানানো হয়েছে।

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে জেলার ৫টি উপজেলার ৪৫টি গ্রামের ২৯ হাজার মানুষ।
সিরাজগঞ্জ পাউবো সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল ১১টায় সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় যমুনা নদীর হার্ড পয়েন্টে যমুনার পানি রেকর্ড করা হয় ১৩ দশমিক ৪১ মিটার। একই স্থানে বেলা তিনটায় রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৪৪ মিটার। এভাবে যমুনার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ১৩ দশমিক ৩৫ মিটার )।

সিরাজগঞ্জ পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, যমুনার পানি গত দুই দিন স্থিতিশীল অবস্থায় থাকার পর আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যার পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, পাহাড়ি ঢলের কারণে আগামী পাঁচ–সাত দিন যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তবে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই।

সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা আবদুর রহিম প্রথম আলোকে জানান, যমুনা পানি বৃদ্ধি পেয়ে যমুনাপারের কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলেও এখনো কোনো বাড়িঘরে পানি ওঠেনি। জেলার ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচটি উপজেলায় সরকারিভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ বরাদ্দ রয়েছে। প্রয়োজনে পানিবন্দী মানুষের মধ্যে সেই বরাদ্দগুলো বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া বর্তমানে জেলায় পৌনে ৬০০ টন চাল মজুত রয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব চাল বিতরণ করা হবে।

গত দুই দিনের ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া জেলার ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর পানিও বেড়েছে।
গত দুই দিনের ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া জেলার ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর পানিও বেড়েছে। এতে জেলার নিচু এলাকার রোপা আমন, পটলসহ বিভিন্ন সবজিখেত তলিয়ে গেছে। এদিকে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, গঙ্গাধর নদ–নদীর বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে ভাঙন।

এ বিষয়ে পাউবোর কুড়িগ্রাম কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ভারী বৃষ্টি ও উজানের পানিতে দ্বিতীয় দফায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই।

(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া এবং প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ ও কুড়িগ্রাম)

Full Video