মুহুরী নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি

ফেনীর মুহুরী নদীর অব্যাহত ভাঙনে জেলার সোনাগাজী উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলে শতাধিক পরিবার ভিটে বাড়ি হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে গিয়ে এই চিত্র দেখা যায়।

জানা গেছে, ভাঙন আতংকে রয়েছে উপজেলার চর দরবেশ, চর চান্দিয়া,চর মজলিশপুর, চরকৃঞ্চজয়, চরলামছি, চরডুব্বা, পূর্ব সোনাপুর ও বাদামতলি এলাকাসহ সদর ইউনিয়নের ১০ গ্রামের মানুষ। এর পরেও উপজেলার চর চান্দিয়া, আমিরাবাদ ও নবাবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় দিনরাত অবৈধভাবে চলছে বালু উত্তোলন।

যার কারণে মুহুরী নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসত বাড়ি, শতশত একর ফসলি জমি, মৎস্য খামারসহ কয়েক কিলোমিটার গ্রাম। গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে দুটি ইউনিয়নের ৬টি গ্রামের শতশত ঘর বাড়ি। আতঙ্কে দিন কাটছে উপকূলীয় নদী পাড়ের সকল বাসিন্দাদের। ভাঙনে তীব্র আকার ধারণ করায় হুমকিতে রয়েছে বেড়িবাঁধ ও চর কৃষ্ণজয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় প্রতি বছর বর্ষা শুরু হলে মুহুরী নদীর ভয়াল থাবায় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায় চর দরবেশ, আমিরাবাদ ও নবাবপুর ইউনিয়নের নদী পাড়ের ঘরবাড়ি। তবুও এটি দেখার যেন কেউ নেই। নেয়া হচ্ছে না ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা। ঘরবাড়ি হারিয়ে রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা। নদীর ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে উপজেলার চর সোনাপুর, চর কৃষ্ণজয়, চর লামছি, চর ডুব্বা, আদর্শগ্রাম ও বাদামতলীসহ আশপাশের এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার চর কৃষ্ণজয়, চর লামছি, চর সোনাপুর. সাহপুর ও চর ডুব্বা এলাকার ১০-১৫টি বাড়ির বসতভিটা, মাছের খামার নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অনেকে বসতঘর বেড়িবাঁধের অপর পাশে সরিয়ে নিচ্ছেন। অতিবৃষ্টি চলমান থাকলে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে গ্রামের শতশত ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মৎস্য খামার, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয় নবাবপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা কবির আহাম্মদ আরটিভি নিউজ জানান, প্রভাবশালী কিছু লোক নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বাড়িঘর, ফসলি জমি ও মৎস্য খামারের মাটি ভেঙে নদীতে চলে গেছে।

সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জহিরুল আলম আরটিভি নিউজকে বলেন, মুহুরী নদী থেকে এক শ্রেণির প্রভাবশালী মহল অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি একাধিকবার লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু কোন সমাধান পায়নি।

তিনি আরও বলেন, এভাবে চলতে থাকলেও সোনাগাজীর মানচিত্র থেকে হয়তো একদিন ইউনিয়ন হারিয়ে যাবে। দ্রুত ভাঙ্গন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সাংসদসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ বিষয়ে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নুর নবী আরটিভি নিউজকে বলেন, গত সোমবার তিনি ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। গত দুই বছর আগেও ভাঙন ঠেকাতে বালু-বর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। কিন্তু পুনরায় ভাঙন শুরু হওয়ায় আবারও ভাঙন প্রতিরোধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

Full Video