পাবজি খেলা নিয়ে দ্বন্দ্ব রসুল খুনে জড়িত কিশোর গ্রেপ্তার

পাবজি গেম খেলা নিয়ে দ্বন্দ্বে নবম শ্রেণির ছাত্র কাজী গোলাম রসুলকে হত্যার অভিযোগে এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ১৮ আগস্ট নরসিংদীতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া কিশোর দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রসুলকে খুন করার পর ওই কিশোর আত্মগোপনে চলে যায়। পরে সিআইডির অনুসন্ধানে জানা যায়, সে নরসিংদীতে আছে। গ্রেপ্তারের পর রসুলকে হত্যা করার কথা স্বীকার করে মাগুরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিয়েছে সে। যে ছুরি দিয়ে রসুলকে সে হত্যা করেছিল, সেটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এর আগে গত ২৭ জুলাই রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ছুরিকাঘাতে নিহত হয় রসুল। পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্তে উঠে আসে, পাবজি গেম খেলাকে কেন্দ্র করে গোলাম রসুল ও তাঁর বন্ধুদের মধ্যে বিরোধ হয়। সেই বিরোধের জেরে রসুলকে খুন করে আরেক কিশোর। নিহত রসুলের গ্রামের বাড়ি মাগুরা জেলায়। তার বাবা কাজী রওনক হোসেন। মাগুরার বেরইল পলিতা এলাকার স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ত রসুল।

কেন রসুল কেন খুন হয়, এ বিষয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আজ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান, কাজী গোলাম রসুল মোবাইলে নিয়মিত পাবজি গেম খেলত।

তার বন্ধুরাও এই খেলায় আসক্ত ছিল। রসুলের এক বন্ধুর একাউন্ট হ্যাক হয়। সেই একাউন্টের পাসওয়ার্ড উদ্ধার নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ হয়। বিরোধের জেরে রসুলকে খুন করে আরেক কিশোর। সেও স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়ে।

গোলাম রসুলের বাবা পেশায় একজন চা বিক্রেতা। দরিদ্র পরিবারের সন্তান রসুল লেখাপড়ার পাশাপাশি রাজমিস্ত্রীর সহকারী হিসেবে কাজ করত। নিজের আয় দিয়ে ৩০ হাজার টাকায় আট মাস আগে একটি স্মার্টফোন কেনে সে। এরপর থেকে সে মোবাইল ফোনে পাবজি, ফ্রি-ফায়ারের মতো খেলায় আসক্ত হয়ে পড়ে।

রসুলের বড় বোন লিপি খাতুন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাইকে যে ছেলেটি খুন করেছে, তার স্বভাব-চরিত্র ভালো না। রসুল আর ওই ছেলে এক সময় একই স্কুলে পড়ত। তবে রসুলকে একবার মারধর করায় ওই স্কুল ছেড়ে অন্য একটি কারিগরি স্কুলে ভর্তি হয় সে। পরবর্তীতে ওই ছেলের সঙ্গে রসুলের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়। তবে পাবজি খেলাকে কেন্দ্র করে আবার বিরোধে জড়িয়ে পড়ে তারা। রসুল খুন হওয়ার কয়েক দিন আগে ওই ছেলের সঙ্গে তার আপোসও হয়। অথচ আপোসের দুদিন পর রসুলকে খুন করে সে।’

গ্রেপ্তার ওই কিশোরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে লিপি আক্তার বলেন, ‘রসুল আমার একমাত্র ভাই। ও খুব ভালো ছিল। কারও সঙ্গে মারামারি করত না। কিন্তু ওর মোবাইল কেনাটাই কাল হয়ে গেল। যদি মোবাইলটা না কিনত, যদি পাবজি না খেলত, তাহলে হয় তো এমন পরিণতি হতো না।’

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, ‘আমরা অভিভাবকদের বলব, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেদের হাতে অ্যান্ড্রয়েড মুঠোফোন তুলে দেবেন না। মুঠোফোন কিংবা কম্পিউটারে কী করছে, সেগুলো নজরদারি করুন।’

সম্প্রতি হাইকোর্ট অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে পাবজি ও ফ্রি ফায়ারের মতো ক্ষতিকারক গেম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। একটি রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

দেশের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে টিকটক, বিগো লাইভ, পাবজি, ফ্রি ফায়ার, লাইকিসহ এ ধরনের অনলাইন গেম ও অ্যাপ বন্ধ করে অবিলম্বে অপসারণের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে গত ২৪ জুন মানবাধিকার সংগঠন ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে রিটটি করা হয়।

Full Video