চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা চরাঞ্চলের মানুষ

অতিবৃষ্টির কারণে ভারত থেকে তীব্রবেগে পানি নেমে আসছে বাংলাদেশে। ফলে ভারত সীমান্তঘেঁষা চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মাসহ সব নদীতে পানি বাড়ছে। প্রতিনিয়ত প্লাবিত হচ্ছে নতুন এলাকা। একইসঙ্গে কিছু এলাকায় শুরু হয়েছে নদীর তীব্র ভাঙনও।

শনিবার (২১ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের গোয়ালডুবি গ্রামের কয়েকশ মিটার এলাকা গত এক সপ্তাহে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী কয়েকটি ইউনিয়নেও নদীভাঙন শুরু হয়েছে। শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ। ফসলি জমি ডুবে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন বানভাসি মানুষ। গো-খাদ্যের অভাবে গবাদিপশু নিয়েও ভোগান্তি বাড়ছে বন্যাকবলিত মানুষদের।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চার ইউনিয়ন এবং শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নের আড়াইশ হেক্টর ফসলি জমি ও সবজিক্ষেত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৬৭ হেক্টর আউশ ধান, ৩০ হেক্টর শাকসবজি ও তিন হেক্টর অনন্যা ফসল। সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত ৫০০ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে ফুঁসে ওঠা পদ্মা নদী সংলগ্ন চরাঞ্চলের অসংখ্য বাড়িঘর, হাট-বাজার, রাস্তাঘাটসহ নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার পাট, ধান, কলা, বেগুনসহ বিভিন্ন সবজিক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। সড়ক ডুবে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে যোগাযোগব্যবস্থা। এরই মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর, শাহজাহানপুর, আলাতুলি ও দেবিনগর ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ইসুফ আলী বলেন, আমার বাড়ির আশপাশের গাজলি, নাইমুল, আজমানেরসহ প্রায় ২০-২৫টি বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। যাদের বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে তারা সবাই আমার এলাকার। আমার বাড়িও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গোয়ালডুবি।

স্থানীয়রা জানান, বেঁচে থাকার শেষ সম্বল ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে এসব পরিবার। তাদের কেউ কেউ এখন আত্মীয়দের বাড়িতে আবার কেউ রাস্তার পাশে দিন কাটাচ্ছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে নদী যেভাবে ভাঙছে তা আরও এক সপ্তাহ অব্যাহত থাকলে আরও শতাধিক পরিবার ঘরবাড়ি হারাবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কানিজ তাসনোভা বলেন, এবারের বন্যায় সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা, নারায়ণপুর, শাহজাহানপুর, আলাতুলি ও দেবিনগর ইউনিয়নের ১৮২ হেক্টর ফসলি জমি ও সবজিক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় ৫০০ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান বলেন, উজান থেকে আসা ঢলে কয়েকদিন ধরেই পদ্মা ও মহানন্দা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে বেশ কিছু এলাকা ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। তবে আজ সকাল থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। এখন বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে সমনে ৪-৫ দিনের মধ্যে ভাঙন কমে আসবে।

Full Video