খাবারের অভাবে, নিজের ৩ মাসের সন্তানকে বিক্রি করলেন মা

পৃথিবীর সৃষ্টির পর থেকে কেউ বেশি খেয়ে মরছেন, আবার কেউ না খেয়ে মরছে না। সেই ধারাবাহিকতায় অভাব যেন চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে মা আলোমতি বেগমকে। বাড়িতে খাদ্য সংগ্রহ করার মতো কোনো সম্পত্তি যেন তার বাসায় নেই একমাত্র কলিজা ছেড়া প্রিয় আদরের সন্তান ছাড়া। বেঁচে থাকার জন্য নিজের তিন মাসের সন্তানকে মাত্র ৪০ হাজার টাকায় সারা জীবনের জন্য তুলে দিলেন মা আলোমতি বেগম।

পুরো পৃথিবীতে চলছে অর্থনৈতিক মন্দা ভাব এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়েছে। করোনা ভাইরাস নামক একটি বস্তু দ্বারা পুরো পৃথিবী বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মানুষ আজকাল যেন কেউ কাউকে সাহায্য সহযোগিতা করা যেন ছেড়ে দিয়েছেন। যদি একজন পয়সাওয়ালা ব্যক্তি আরেকজন দরিদ্র গরিব ব্যক্তিকে সহায়তা করলে হয়তো বিক্রি করা লাগত না তার কলিজার ধনকে।

৩ মাসের সন্তানকে বিক্রি করা মা আলোমতি বেগম। সংসারের অভাব-অনটনের কারণে সন্তানসহ নিজেদের ৩ বেলা খাবার না জোটায় নিজের শিশু সন্তানকে বিক্রি করে দিলেয়েছেন এক মা। মাত্র ৩ মাস বয়সের ওই কন্যা শিশুকে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার ঘটনায় তোলপাড় চলছে এলাকাজুড়ে।

বরিশালের হিজলা উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের পূর্বকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বকুল চন্দ্র কবিরাজ এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে শিশুর বাবা মুসা সরদার শিশু বিক্রির বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

শিশুর মা আলোমতি বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের কাছে জানতে চান, ‘এত দিন কোথায় ছিলেন আপনারা? কোথায় ছিল এত মানবদরদী। কই সেদিন তো কাউকে দেখিনি। এলাকার কোনো চেয়ারম্যান-মেম্বার আইসা একবার দেখিনি। না খেয়ে কত দিন শিশু বাচ্চা নিয়ে কেঁদেছি, আমি আমার বাচ্চাকে কম কষ্টে বিক্রি করিনি। ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে আমার বাচ্চাকে বিক্রি করে দিয়েছি।

তিন সন্তানের এই জননী আরও বলেন, আমার স্বামী জেলে, সে নদীতে মাছ ধরে। গত কয়েক মাস যাবৎ নদীতে কোনো মাছ নেই। তাই সংসার চালাতে পারছেন না। সরকারি কোনো সাহায্য ভিজিডি-ভিজিএফ, রেশনর্কাড, জেলে কোনো কিছুই তারা পাননি। চুলায় এক দিন আগুন জ্বললে, তিন দিন জ্বলে না।

না খেয়ে কতদিন থাকতে পারে মানুষ। হরিনাথপুর ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. ফয়জুল হক লিটন বলেন, ‘আমি ঈদে তাকে ১০ কেজি চালের দুটি স্লিপ দিয়েছি। তার স্বামী কোনো কাজ করে না। ঘোরাফিরা করে, অভাব তো তাদের থাকবেই। হরিনাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান তৌফিকুর রহমান সিকদার জানান, দালালের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে শিশুটিকে বিক্রি করে দেয়। তার স্বামী কোনো কাজ না করে বেকার থাকেন, এটাই তাদের অভাবের একমাত্র কারণ।

গত ঈদে স্থানীয় মেম্বরের মাধ্যমে তাকে ২০ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে চেয়ারম্যান জানান, শিশু বাচ্চাকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে চেষ্টা করা হচ্ছে। হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বকুল চন্দ্র কবিরাজ বলেন, ‘লোকমুখে জানতে পেরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে শিশু বাচ্চাকে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

এখন সাধারণভাবে মানুষের মনে প্রশ্ন জাগছে তাহলে কি পয়সাওয়ালা রা পয়সা কামিয়ে বিবেককে জাদুঘরে তুলে রেখেছেন যা ভবিষ্যতে মানুষ টাকা দিয়ে দেখতে যাবে। ভবিষ্যতে এমন বিবেককে মানুষ পয়সা দিয়ে নয় মন দিয়ে ঘৃণা করবে। আলোমতির বাড়ির কাছে অবশ্যই অনেক পয়সাওয়ালা ব্যক্তি বসবাস করেন তারা কি জবাব দেবেন দুনিয়ার কথা বলছি না! পরকালে?

বিডি নিউজ২৩ এর পক্ষ থেকে করোনা সাবধানতাঃ এই ভাইরাস থেকে একটু রক্ষা পেতে চাইলে অবশ্যই জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। মুখে মাস্ক ভালোভাবে ব্যবহার করার কোনো বিকল্প পথ নেই। নিজে সতর্ক থাকতে হবে অন্যকেও সতর্ক ভাবে রাখতে হবে। যতোটুকু সম্ভব হয় বাহিরে যাওয়া একদম কমিয়ে দিতে হবে। বাহিরে না গেলেই সবচেয়ে ভালো।

Full Video