পরীমণিকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করছে পুলিশ

বোট ক্লাবে ঘটে যাওয়া সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। সেগুলো বিশ্লেষণ ও তদন্ত করে সেখানে মারামারি, ভাঙচুর ও অকথ্য গালাগালের ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরেছে পুলিশ। এরই মধ্যে নায়িকা পরীমণির মামলায় আটক দুই আসামি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী ওরফে অমিকে মাদক মামলায় রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।সিসি টিভির ফুটেজে দেখা যায়, রাত ১১টার পর ক্লাবে দুটি গাড়ি পৌঁছায়। একটি গাড়ি থেকে অমি, আরেক গাড়ি থেকে এক তরুণী (পরীমণি) ও আরেক ব্যক্তি নামেন। এরপর তাঁরা ক্লাবের ভেতরে বসেন।

পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারের পর নাসির উদ্দিন ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেছেন, পরীমণি কাউন্টারে গিয়ে ব্লু লেবেল ব্র্যান্ডের এক লিটারের একটি মদের বোতল চান। পরে অভ্যর্থনা কক্ষে রাখা তিন লিটারের ব্লু লেবেলের একটি বোতল নিয়ে যেতে চান। এ সময় নাসির উদ্দিন বাধা দেন এবং ক্লাবের নিরাপত্তাকর্মীদের ডাকেন। তখন পরীমণি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এ সময় পরীমণির সঙ্গে থাকা তার কস্টিউম ডিজাইনার ফরিদুল করিম জিমি বোতল ভাঙচুর করেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পরীমণিকে চড় মেরেছেন বলেও স্বীকার করেন নাসির উদ্দিন মাহমুদ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) উপকমিশনার মশিউর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বোট ক্লাবে মারামারি, ভাঙচুর ও অকথ্য ভাষায় গালাগালের ঘটনা কোন প্রেক্ষাপটে ঘটেছিল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।এদিকে বোট ক্লাবের আগের রাতে ঢাকার গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে পরীমণি ‘ভাঙচুর করেছেন’ বলে গতকাল গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। যাকে ‘ভিত্তিহীন অভিযোগ’ বলছেন পরীমণি।

বুধবার (১৬ জুন) রাতে তার নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সাথে তিনি বলেন, বোট ক্লাবের ঘটনাকে ধামাচাপা দিতেই পরিকল্পিতভাবে সাজানো হয়েছে অল কমিউনিটি ক্লাবের ঘটনা।পরী বলেন, ঘটনা যদি সত্যিই ৮ তারিখের হতো এবং আমি যদি অপরাধ করেই থাকতাম তাহলে এতদিন ক্লাব কর্তৃপক্ষ কেন চুপ ছিল, কেনইবা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলো না? এতেই বোঝা যায় এটি সাজানো ও পরিকল্পিত। আর যদি এমন ঘটনা হয়েই থাকে তাহলে এটা নিয়েও যেন তদন্ত হয়।

এর আগে পরীমণির বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও ক্লাবে ভাঙচুরের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেন রাজধানীর গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাব কর্তৃপক্ষ।সংবাদ সম্মেলনে অল কমিউনিটি ক্লাবের সভাপতি কে এম আলমগীর ইকবাল বলেন ‘আমাদের ক্লাবে কিছুদিন আগে (৮ জুন) ছোট্ট একটি অঘটন ঘটেছিল। আমাদের ক্লাবের নিজস্ব কিছু নিয়মকানুন আছে। বিশেষ করে কোনো মেয়ে যদি ক্লাবে আসে তাহলে তাকে কিছু ড্রেস কোড মেনে আসতে হয়। সেদিন এখানে যারা এসেছিলেন তাদের মধ্যে একজন ছিলেন হাফপ্যান্ট ও স্যান্ডেল পরা। তখন আমাদের কর্মকর্তারা বলেন, আপনারা তো ক্লাবের নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। তাদের ক্লাব থেকে এটা বলায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সময়ে তারা যে সদস্যদের মাধ্যমে ক্লাবে আসেন তিনিও তাদের চলে যেতে বলেন। কিন্তু তারা যেতে চাননি। পরে বাধ্য হয়ে আমাদের সেই সদস্য চলে যান। এর মধ্যে আমাদের ক্লাবের সব কর্মকর্তা চলে যান। শুধু দুজন ওয়েটার ছিল। তখন তারা ৯৯৯-এ কল করে পুলিশ ডাকেন। পুলিশ এলে তারা ক্লাব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তাদের হেনস্তার অভিযোগ করেন। কিন্তু বাস্তবে তখন আমাদের তেমন কেউ ছিল না। ঘটনার সময় তখন রাত ১টা থেকে দেড়টা বাজে। বরং এই সময়ে একজন আমাদের ক্লাবের ১৫টি গ্লাস, নয়টি অ্যাসট্রে, বেশকিছু হাফ প্লেট ভাঙেন। পরে আমরা জানি, তার নাম পরীমণি। পুলিশ এসেও এর সত্যতা পায়। পরে পুলিশ ঘটনার বিষয়ে তাদের ঊর্ধ্বতনদের জানায়। তারা ওই পুলিশ সদস্যদের চলে যেতে বলেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে আলমগীর ইকবাল বলেন, ‘ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী যে সদস্যের মাধ্যমে তারা এসেছিলেন, আমরা তাকে শোকজ করেছি।’
এদিকে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে পরীমণির বিরুদ্ধে জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করা হয়েছে বলা হলেও সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে কিছু বলেননি ক্লাব সভাপতি। জিডির বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এ ঘটনায় থানায় কোনো জিডি হয়নি।

Full Video