বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রকোপের মধ্যেও রেমিট্যান্স পাঠানো অব্যাহত রেখেছেন প্রবাসীরা। প্রতি মাসেই বাড়ছে রেমিট্যান্সের পরিমাণ। গত মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ২১৭ কোটি ১১ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এতে চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশে ২ হাজার ২৮৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশ মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৯৪ হাজার ১১৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গত মে মাসে প্রবাসীরা ২১৭ কোটি ১১ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৮ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। যা আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ৬৬ কোটি ৬৫ লাখ ডলার বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৯ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৬৩৭ কোটি ২০ লাখ ডলার।
২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়। বৈধ উপায়ে প্রবাসী আয় বাড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সে অনুযায়ী, গত বছরের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠালে প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ২ টাকা প্রণোদনা পেয়ে আসছেন। এর ফলে করোনার মধ্যেও রেকর্ড গড়ছে রেমিট্যান্স। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে মন্দা কাটাতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ৫ হাজার ডলার বা প্রায় ৫ লাখ টাকা কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়া ২ শতাংশ নগদ সহায়তা দিচ্ছে সরকার। যা আগে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়া নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছিল।
এদিকে গত নভেম্বরে রেমিট্যান্স পাওয়া আরো সহজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রেমিট্যান্স প্রদানকারী ব্যাংক রেমিটারের কাগজপত্র নিজ দায়িত্বেই যাচাই করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রণোদনার অর্থ ছাড় করার জন্য রেমিট্যান্স আহরণকারী ব্যাংকের কাছে ‘কনফার্মেশন’ পাঠাবে। তার ভিত্তিতে রেমিট্যান্স আহরণকারী ব্যাংক রেমিট্যান্স প্রদানকারী ব্যাংক বরাবর প্রণোদনার টাকা ছাড় করবে বলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রেমিট্যান্স বাড়ার কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিকে অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়াকে নির্দেশ করে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মজুত থাকলে তাকে ঝুঁকিমুক্ত দেশ হিসাবে চিহ্নিত হয়। বাংলাদেশের কাছে এখন যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার মজুত আছে তা দিয়ে ১০ মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। কিছুদিন আগে ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গতকাল আবার রিজার্ভ বেড়ে ৪৫ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে।